ইসলামীক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদের কমিটি গঠন

 

formation-mosque-committees-Islamic-social-perspective



---

আলোকবর্তিকা:

আজকাল মসজিদের কমিটি হ‌ওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু হয়েছে এটি কোনো ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। এটি একটি পবিত্র স্থান, মনে রাখবেন এখানে কোনো ধরনের কালপ্রিট, নোংরা এবং ঘৃন্য মনের মানুষের স্থান নেই।


যারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য, যারা অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য, যারা একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য মসজিদের কমিটি হতে চায়, তাঁদেরকে এধরনের কমিটি থেকে বিরত রাখাই উচিত। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।


এটি এমন একটি বিষয়, যা একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে আবার একটি সমাজকে মারামারি ভাঙচুর এবং হিংসা বিদ্বেষের দিকে ঢেলে দিতে পারে, তাই আসুন আমরা ভালো করে জেনে নিই যে কি ভাবে মসজিদের কমিটি গঠন করতে হয় এবং কারা মসজিদের কমিটি হ‌ওয়ার যোগ্য ব্যক্তি।


ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদের

 কমিটি গঠন


১. নেতৃত্বের যোগ্যতা (Leadership with Taqwa):

ইসলামে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তা’ওয়াল্লাহ (আল্লাহভীতি) ও আখলাক (চরিত্র)। মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর, তার পরিচালনায় থাকতে হবে সেই সব ব্যক্তিদের, যারা:

নামাজে নিয়মিত,

হারাম থেকে দূরে থাকেন,

কোরআন-হাদীসের জ্ঞান রাখেন,

দ্বীনের প্রতি আগ্রহ ও দায়বদ্ধতা রাখেন।


২. আমানতদারি ও ইখলাস:

নবী করিম (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি আমাদের নেতৃত্ব চায়, তাকে নেতৃত্ব দিও না" (সহীহ হাদীস)।

এখানে বোঝানো হচ্ছে, মসজিদের দায়িত্ব যিনি নিবেন, তার মধ্যে নিঃস্বার্থ ইচ্ছা থাকতে হবে। অর্থাৎ জনপ্রিয়তা, ক্ষমতা বা প্রভাব খাটানোর জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দায়িত্ব নিতে হবে।


৩. পরামর্শ ও শূরা (Shura):

কোরআনে আল্লাহ বলেন:

“...তাদের কাজকর্ম পরস্পরের পরামর্শক্রমে পরিচালিত হয়” (সূরা আশ-শূরা: ৩৮)।

কমিটি গঠনে পরামর্শ, মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এককভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত।


---


সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কমিটির

 সদস্যদের যোগ্যতা


১. সমাজে গ্রহণযোগ্যতা:

কমিটির সদস্যদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। তারা যেন:

সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি হন,

বিভাজন সৃষ্টি না করেন,

গিবত, ফিতনা, রাজনীতির খপ্পরে না থাকেন।



২. নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ:

কমিটির সদস্যদের উচিত:

সব দলমত নির্বিশেষে মুসল্লিদের কথা শোনা,

ধর্মীয় ও সামাজিক সমন্বয় রক্ষা করা,

কোনো ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে কাজ না করা।


৩. শিক্ষিত ও সচেতন হওয়া:

যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিটির সদস্যদের মধ্যে:

ধর্মীয় জ্ঞান,

সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা,

আইনি ও আর্থিক সচেতনতা থাকা ভালো।


৪. সেবা ও ত্যাগের মনোভাব:

কমিটির সদস্যদের ভেতরে “আমি না, বরং আমাদের মসজিদ” – এই চেতনা থাকতে হবে। যেন তারা:

নিজের সময়, শ্রম, সম্পদ দিয়ে মসজিদ পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পারেন,

অন্যদের উৎসাহিত করতে পারেন।

---


মসজিদের কমিটি গঠনে করণীয় কিছু প্রস্তাবনা:

১. নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা সবচেয়ে সঠিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া।

২. পরিষ্কার গঠনতন্ত্র থাকতে হবে – কারা সদস্য হবেন, মেয়াদ কতদিন, দায়িত্ব কী হবে ইত্যাদি।

৩. স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও সমাজসেবীদের পরামর্শে কমিটি গঠিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হয়।

৪. মেয়াদ শেষে দায়িত্ব হস্তান্তর যেন হয় নিয়ম মাফিক ও শান্তিপূর্ণভাবে।


---


অবশেষে: 

মসজিদ আল্লাহর ঘর, সবচেয়ে পবিত্র এবং সবচেয়ে সার্বজনীন স্থান। মসজিদ শুধু নামাজ পড়ার স্থান নয়, এটি মুসলিম সমাজের কেন্দ্র। তাই এর পরিচালনা যেন:

দ্বীনি ভাবধারায় হয়,

সমাজে ঐক্য সৃষ্টি করে,

এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।

যে কমিটি এসব দিক মাথায় রেখে গঠিত হবে, তার মাধ্যমেই মসজিদ হবে হিদায়াত ও শান্তির আলোয় উদ্ভাসিত।


---

সমাপ্ত।



No comments

Powered by Blogger.