কুরআন হাদীসে থাকলেই আমল করতে হবে ? কোরআনে রহিত হওয়া কয়েকটি বিধান
কুরআন হাদীসে থাকলেই আমল করতে হবে ?
কোরআনে রহিত হওয়া কয়েকটি বিধান
কুরআন হাদীসে থাকলেই আমল করতে হবে এই চিন্তাটাই ভুল। বরং আমল করতে হবে কুরআন-হাদীসের সর্বশেষ বিধান তথা সুন্নাহর উপর।কুরআনের একাধিক আয়াত এবং হাদীসের কিতাব হতে বেশ কয়েকটি হুকুম উল্লেখ করা হবে, যে হুকুম-আহকাম প্রাথমিক যামানায় থাকলেও পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে যাওয়ায় এখন উম্মতের জন্য তা আমলযোগ্য নয়।
এ কারণেই কেবল কুরআনের আয়াতের অনুবাদ পড়ে যেমন আমল করা বৈধ নয়, তেমনি শুধু হাদীসের তরজমা পাঠ করে আমল করাও জায়েয নয়। কুরআনের এমন অনেক আয়াত রয়েছে, যা নামাযে তিলাওয়াত করা হয়, তারাবীহতে যা তিলাওয়াত না করলে খতম পূর্ণ হয় না। এতদসত্ত্বেও সে আয়াতে উল্লিখিত বিধানাবলী রহিত হয়ে যাওয়ায় তার উপর আমল করা উম্মতের জন্য জায়েয নয়।
|★| প্রথম আয়াতুল কারিম
আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৮০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন,
كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ
অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর ফরয করে দিয়েছেন যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু নিকটবর্তী হয়, আর তার ধন-সম্পদও থেকে থাকে, তাহলে সে তার মাতা-পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওসিয়্যাত করে যাবে। মুত্তাকীনদের জন্য এটি অবশ্য করণীয়।
অথচ এ আয়াতের উপর আমল করা হারাম সূরা নিসার ১১ নম্বর আয়াত দ্বারা মানসূখ তথা রহিত হয়ে গেছে।
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
উক্ত আয়াতদ্বয়ের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা সকলের অংশ খুলে খুলে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আয়াতদ্বয় নাযিল হওয়ার পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, এখন থেকে নির্ধারিত অংশের হকদারদের জন্য ওসিয়্যত বৈধ নয়।
|★| দ্বিতীয় আয়াতুল কারিম
আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারার ২৪০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لِأَزْوَاجِهِمْ مَتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِي مَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ مِنْ مَعْرُوفٍ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
অর্থ: ‘তোমাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়ে যায় এবং স্ত্রী রেখে যায়, তারা যেন (মৃত্যুকালে) স্ত্রীদের অনুকূলে ওসিয়্যত করে যায় যে, তারা এক বছর পর্যন্ত (পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে খোরপোষ গ্রহণের) সুবিধা ভোগ করবে এবং তাদেরকে (স্বামীগৃহ থেকে) বের করা যাবে না। হ্যাঁ, তারা নিজেরাই যদি বের হয়ে যায়, তবে নিজেদের ব্যাপারে তারা বিধিমত যা করবে, তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। আল্লাহ মহা ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়।”
উক্ত আয়াতে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে এক বছর ইদ্দত পালন করতে বলা হয়েছে। অথচ এই হুকুমকে রহিত করে পরবর্তীতে নাযিল হয়েছে, وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا
অর্থ: ‘তোমাদের মধ্যে যারা মারা যায় ও স্ত্রী রেখে যায়, তাদের স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে’।
হাদীস শরীফের ন্যায় কুরআন পাকের আয়াতসমূহও অবতীর্ণ হওয়ার সময়ের পূর্বাপরের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাজানো হয়নি। অতএব শুধু কুরআনের অনুবাদ পড়ে আমল করা নিশ্চিত গোমরাহী।
|★| তৃতীয় আয়াতুল কারিম
প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রোযার বিধান এসেছে শিথিলভাবে। যাদের সুবহে সাদিকের পূর্বে সাহরী খেয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানাপিনা এবং গুনাহ বর্জনের হিম্মত হয় তারা রোযা রাখবে। হিম্মত না হলে না রাখারও সুযোগ ছিলো। প্রতি রোযার বদলে একজন ফকীরকে দুবেলা খাওয়ালে বা এর মূল্য দিয়ে দিলে রোযা আদায় হয়ে যেতো।
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
অর্থ: যারা রোযা রাখার সামর্থ্য রাখে, তারা একজন মিসকিনকে খানা খাইয়ে (রোযার) ফিদিয়া আদায় করতে পারবে।
রোযার এ প্রাথমিক বিধানের সময় অনেকেই রমাযানে হিম্মত করে রোযা রাখতেন আর কোন কোন সাহাবী ফকীরকে দু’বেলা খাওয়াতেন। তবে তারাও নিজেদের পিতা মাতা, ভাই বোন, বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের রোযা রাখা দেখে বুঝতে পারলেন যে, সারাদিন খানা-পিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থেকে রোযা রাখা সম্ভব, এবং আগামীতে রোযা রাখার নিয়ত করলেন,
তখন আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থ: এখন থেকে তোমাদের মধ্যে সামর্থ্যবান ব্যক্তি রমযান মাস পেলে অবশ্যই রোযা রাখবে।
সামর্থ্যবানদের রোযা না রেখে ফকীরকে খানা খাওয়ানোর বিধান রহিত হয়ে গেলো। এ হুকুম শুধুমাত্র অতিশয় বৃদ্ধ, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য বহাল থাকলো। তারা প্রতিটি রোযার বদলে একজন ফকীরকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে বা একটি সদকায়ে ফিতর পরিমাণ মূল্য দিয়ে দিবে।
No comments