আপনি যে জমিটি কিনছেন সেটার দলিল জাল নয় তো ?

এজমালি সম্পত্তি অর্থাৎ ভাইবোন মিলে যে সম্পত্তি ভোগ করে থাকে- এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাইয়েরা বোনদের না জানিয়ে দলিল তাদের নামেই করিয়ে থাকে। মালিকানা ছাড়াই দলিলদাতা সেজে বা কাউকে মালিক সাজিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়।মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে জালিয়াতি করা হতে পারে।অনেক সময় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়। সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করা হয় না, সে ক্ষেত্রে দলিল জালের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

|◆| রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষীত দলিলের সাথে মিলানো

কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাথে সাল মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে সংরক্ষিত থাকে।

সম্প্রতি কোনো আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না তা যাচাই করতে হবে। সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রিত দলিলে দলিল লেখকের নাম ঠিকানা জেনে সরেজমিন কথা বলে নেওয়া দরকার।

|◆| ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের পেছনে নাম্বার দেখে নিন

দলিল সম্পাদনের সময় ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের পেছনে কোন ভেন্ডার থেকে স্ট্যাম্প কেনা হয়েছে এবং কার নামে কেনা হয়েছে তা খেয়াল রাখুন। প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে একটি ক্রমিক নাম্বার উল্লেখ থাকে।এ নাম্বারটি ঠিক আছে কি না তা দেখে নিন। প্রয়োজনে স্ট্যাম্প বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে যাচাই করে নিন। তাহলে আর সন্দেহ থাকবে না।

|◆| নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া

সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ান এর কোনো গড়মিল আছে, তাহলে ধরে নিতে হবে সমস্যা আছে।

|◆| সরেজমিনে লোকজনের সঙ্গে কথা বলা

একাধিক মালিকের ক্ষেত্রে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে তা নির্ণয় করতে হবে। ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করে জালিয়াতি হয়েছে কিনা ভালো করে দেখে নিতে হবে। অনেক সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দলিলদাতা বা গ্রহীতা সাজা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করা।

কোনো দান করা জমি হলে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করতে হবে। দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কি না এবং দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী তা যাচাই করতে হবে।

|◆| সব দলিল বুঝে নেওয়া

সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, বিক্রেতার কাছ থেকে সব দলিল, বিশেষ করে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক আছে কি না। তাহলে আর জাল দলিল বানাতে পারবে না। 

|◆| কোনো অসংলগ্ন চোখে পড়ে কিনা দেখে নিন

জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করুন। দাগ নাম্বার, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। ভালো করে তারিখ, সিল কাগজ, ইত্যাদি লক্ষ্য করুন। দেখুন কোনো অসংলগ্ন চোখে পড়ে কি না।