হজ্জ্বব্রত অবস্থায় কয়েকটি মারাত্মক ভুল
হজ্জ্বব্রত অবস্থায় কয়েকটি মারাত্মক ভুল
হজ্ব ইসলামের মূল স্তম্ভ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ। এটি আদায় করার জন্য শরিয়তে খুবই গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর জীবনে একবার অবশ্যই হজ্ব পালন করতে হবে। আর শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সামর্থ্যবানের উপর প্রতি চার বছরে একবার ওমরাহ পালন করতে হবে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে হজ্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্যই বলা হয়েছে সামর্থ্যবান যেন বিলম্ব না করেন।
|◆| মোবাইল বা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা
এক শ্রেণির হাজ্বী সাহেব আছেন, যারা সারাদিন মোবাইল বা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে থাকেন। অথচ প্রাণির ছবি তোলা হারাম কাজ। (বুখারী শরীফ; ৪র্থ খন্ড,পৃ.৭১ হাদীন নং ৫৯৫০) তারা হজ্বে গিয়েও হারাম শরীফের মধ্যে এই হারাম কাজ করছে। হজ্বের সফরে হারাম কাজ করলে হজ্জে্ মাবরুর নসীব হয় না।
|◆| হজ্জ্বে গিয়ে দাড়ি কাটা
অনেক পুরুষগন ইহরাম খোলার সময় যেখানে শরী‘আত বলেছে মাথা মুণ্ডানোর কথা, সেখানে তারা দাড়িও মুণ্ডায়। এটা ভীষণ একটা ভুল কাজ।
শায়খ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. বলতেন, “দেশে অন্যায় কাজ করলে, আবার আল্লাহর ঘরে গিয়েও তা করলে! এভাবে তোমার কয়েক লাখ টাকার হজ্জ ঐ জায়গায়ই দাফন করে আসলে।”
|◆| দল নেতার সাথে তাল মিলিয়ে তালবিয়া পড়া
“তালবিয়া” ইনফিরাদী আমল। সবাই যার যার তালবিয়া সে নিজে নিজেই পড়বে। দেখা যায়, অনেকেই তাদের দল নেতার সাথে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে তালবিয়া পড়তে থাকে। অথচ এর কোনো প্রমাণ নেই। এমটা না করাই যেন উচিত। কেননা এতে হজ্জ্বে মাবরুর নাও মিলতে পারে।
|◆| মুযদালিফা মনে করে অবস্থান করা
আরাফাহ ও মুযদালিফার মধ্যখানে ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি ময়দান আছে, যেখানে অনেক টয়লেট ও গাছপালা আছে। এ সব থেকে অনেকেই এটাকে মুযদালিফা মনে করে এখানে অবস্থান করে, অথচ এটা আরাফার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং মুযদালিফার মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত নয়, এটা ভিন্ন একটা ময়দান। এখানে হজ্জ্বের কোনো কাজ নেই।
এখানে মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়া জায়েয নাই,এবং রাত্রে অবস্থান করাও জায়েয নাই।বাদ ফজর এখানে উকূফ করলে উকূফে মুযদালিফাও আদায় হবে না। অথচ যারা পায়ে হেঁটে আরাফাহ থেকে মুযদালিফায় যায়, তাদের অনেকেই এই ভুলটা করে থাকে। তাদের উপর “দম” ওয়াজিব হয়ে যায়, কিন্তু তারা তাহা না জানার কারণে আদায় করে না।
|◆| ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানী না করানো
ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানী না করানো উচিত। কারণ এতে কখনো কখনো দশ তারিখে বড় শয়তানকে পাথর মারার আগে কুরবানী হয়ে যায়। আবার কখনো কুরবানী সম্পূর্ণ হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডানো হয়ে যায়। আর এ উভয় ভুলের কারণে তামাত্তু ও কিরানকারীর উপর দম ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ তাদের জন্য ১০ তারীখে এই তিনটি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী।
এই ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করার জন্য দম দিতে হবে।
তিনটি ধারাবাহিকতা হলো যথাক্রমে,
◆ বড় শয়তানকে কংকর মারা
◆ কুরবানী করা
◆ মাথা মুণ্ডানো
এ জন্য নিজেরা বা বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়ে কুরবানীর ব্যবস্থা করা জরুরী। কংকর মারার পর কুরবানী করবে। তারপর কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর মাথা মুণ্ডাবে। মাথা মুণ্ডানোর দ্বারা বা চুল ছোট করার দ্বারা হালাল হয়ে যাবে, তখন ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ নিষিদ্ধ ছিলো, তা এখন জায়িয হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ইহরামের চাদর খুললে ইহরাম খোলা হয় না বা হালাল হওয়া যায় না।
|◆| মহিলাদের চেহারা খোলা রাখা
মাসআলা হলো যে, চেহারা দেখা যাবে না, তবে বোরকার নেকাব চেহারার সাথে লেগে থাকবে না। এর জন্য এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে যাতে করে নেকাব চেহারার সাথে না লেগে থাকে। তাহলে তার পর্দা করা হয়ে যাবে এবং হজ্বও আদায় হয়ে যাবে।
|◆| মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত জামা‘আতে যাওয়া
মহিলাদের জন্য পাঁচওয়াক্ত হারামের জামা‘আতে ও জুমুআ'য় যাওয়া মাকরুহে তাহরীমী। অথচ দেখা যায় যে, মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত জামা‘আতে যাচ্ছে। যার কারণে ভিড় বেশি হচ্ছে। তারাও গোনাহগার হচ্ছে, পুরুষরাও গোনাহগার হচ্ছে। যাচ্ছে ফযিলাতের জন্য, অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মহিলা হজ্ব বা উমরায় এসে ঘরে নামায পড়লে এক লাখের চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবে।
মুসনাদে আহমাদ; ৬ষ্ঠ খন্ড
No comments