মুনাজাতের সুন্নাত ও আদব-কায়দা সমূহ
মুনাজাতের সুন্নাত ও আদব-কায়দা সমূহ
৷৷●৷৷ মা'লুমাত
মুনাজাত অর্থ প্রার্থনা। বিশেষ ভাবে প্রতিপালক সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাওয়া। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মুখের উচ্চারিত কথা এবং মনে মনে ভাবা কথাও শুনতে পান। মুনাজাত দুহাত তুলে মৃদু শব্দে কিংবা মনে মনেও হতে পারে। মুনাজাত হতে হবে বিনম্র এবং আখলাকের সাথে, যতটুকু কাকুতি মিনতি করা যায়। আল্লাহ একদিন না একদিন আপনার মুনাজাত কবুল করবেই। আল্লাহ অসীম দয়ালু এবং মেহেরবান।
|●| মুনাজাতের আদব সমূহ
প্রত্যেক কিছুরই আদব কায়দা আছে। আদব কায়দা মতো পেশ করা ধর্মের অমেয় নিয়ম। আমরা আল্লাহর গোলাম, আল্লাহ আমাদের মনিব, তাই মনিবের সামনে সে ভাবেই পেশ হতে হবে।
【1】সর্বপ্রথম আদব হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দুরূদের মাধ্যমে দু‘আ শুরু করা। আসমায়ে হুসনা ও ইসমে আ‘যমের মাধ্যমে দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরূদ না পড়া পর্যন্ত সকল দু‘আ আটকে থাকে। (ত্ববারানী আউসাত, হাদীস: ৪৩৯৯)
যেমন: এভাবে দু‘আ শুরু করা-
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى
نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰ لِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ.
অর্থাৎ : সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য এবং রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ এবং সকল সাথীবর্গের উপর।
【2】উযুর সাথে কিবলামূখী হয়ে দু‘আ করা। (মুসলিম, হাদীস: ১৭৬৩)
【3】উভয় হাত বুক বরাবর সামনে রাখা। হাতের তালু আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখা। (আবু দাউদ, হাদীস: ১৩১৮,১৪৮৮)
【4】হাতের আঙ্গুলসমূহের মাঝে স্বাভাবিক ফাঁকা রাখা।
【5】দু‘হাতের মাঝে সামান্য ফাঁকা রাখা।
【6】মন দিয়ে কাকুতি মিনতি করে দু‘আ করা।
【7】প্রার্থিত বিষয়টি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে দৃঢ়তার সাথে বারবার চাওয়া এবং চোখে জল আনার চেষ্টা করা।
【8】ইখলাসের সাথে নিঃশব্দে দু‘আ করা মুস্তাহাব। তবে দু‘আ সম্মিলিত হলে এবং কারো নামাযে বা ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হলে স্বশব্দে করা জায়েয।
【9】দু‘আর শেষে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দুরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলা যেমন,,
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ . اَللّٰهُمَّ اٰمِيْنْ
অর্থাৎ : তারা যা দোষারোপ করে তা হতে আপনার প্রতিপালক মহা পবিত্র, যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী। শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলগণের প্রতি এবং সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। হে আল্লাহ! তুমি কবুল করো। (সূরা ছফফাত,আয়াত:১৮০-১৮২)
【10】মুনাজাতের পর উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মুছে নেওয়া।
|●| হাদীসের বর্ণনা
হযরত ফাজালা ইবনে উবায়দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামায পড়ে দু‘আ করতে লাগল। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো। আমার প্রতি দয়া করো। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে মুসল্লী! তুমি তাড়াহুড়া করেছ।
তুমি যখন নামায পড়ে বসবে তখন প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে অতঃপর আমার প্রতি দুরূদ পড়বে তারপর দু‘আ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আরেকজন লোক এসে নামায পড়ল। আল্লাহর প্রশংসা করল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরূদ পড়ল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে মুসল্লী! তুমি দু‘আ করো, তোমার দু‘আ কবুল করা হবে।
(তিরমিযী, হাদীস:৩৪৭৬)
No comments