মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি
৷◆৷ প্রারম্ভিকা
জন্ম মৃত্যুর একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ ইচ্ছামতই সবকিছু সংগঠিত হয়ে থাকে। আমাদের জন্মের সিরিয়াল আছে কিন্তু মৃত্যুর কোন সিরিয়াল নেই অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রথমে এসেছেন আপনার দাদা,তারপর আপনার পিতা,তারপর আপনি, তারপর আপনার ছোট ভাই বোন সকালে।
কিন্তু মৃত্যুর বেলায় এই সিরিয়াল আর আল্লাহ পাক রাখেননি,অর্থাৎ আপনার দাদার আগে হয়তো আপনিই মরে যেতে পারেন অথবা আপনার আগে আপনার বোন ভাই বোন মরে যেতে পারে, এর কোন সিরিয়াল নেই। তাই ঈমান আমল নিয়ে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। যখনই ঢাক আসে সাড়া দিতেই হবে, তাই সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
৷●৷ মৃত ব্যক্তিকে কে গোসল দেবে ?
মৃত ব্যক্তির গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তিই হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করে গেছেন। তারপর তার পিতা, তারপর নিকটাত্মীয়। বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল যে কোন ব্যক্তি দিতে পারবেন। তবে এইক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পুরুষের গোসল পুরুষ দিবে আর মহিলাদের গোসল মহিলাগণ দিবে। আর মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় তার গোসল দেয়া উত্তম। ( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী )
৷●৷ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সুন্নাত পদ্ধতি
প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অত:পর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশি করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে না তাকিয়ে ধৌত করবে।
তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং সালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভেজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতরের অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে তার নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান পাশের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে।
তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তিনবারের বেশি সাত বা ততোধিক বার গোসল দেয়া যাবে। শেষ বার কর্পূর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। (বুখারী ও মুসলিম)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর গোসল দাতা নিজের গোসল করা মুস্তাহাব, জরুরী নয়। নাপাক অবস্থায় অর্থাৎ গোসল ফরজ অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাকে এশবার গোসল দেয়াই যথেষ্ট, তবে এ সময় গোসল দেয়ার সময় তাকে অবশ্যই কুলী করাতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে। এবং পরে তুলা বা কোন কাপড় দিয়ে তা মুছে নিতে হবে।
গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ্ করে (মুছে) দিবে।
মনে রাখবেন !
মৃতের মোচ বা নখ যদি বেশি বড় থাকে তবে তা কেটে দেয়া মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না। মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুল গুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে। ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে।
No comments