আপনি কি জানেন? শাপলা কীভাবে জাতীয় ফুল হলো?
বাংলাদেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে শাপলা ফুল। জলাশয়ে ভেসে থাকা এই সাদা ও লাল রঙের মনোমুগ্ধকর ফুল শুধু আমাদের গ্রামীণ সৌন্দর্যকেই তুলে ধরে না, বরং জাতীয় পরিচয়েরও একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন—শাপলা কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হলো?
🌸 শাপলার পরিচয়
শাপলা হলো এক ধরনের জলজ ফুল যা মূলত পুকুর, খাল, বিল ও হাওরে জন্মায়। বাংলার গ্রামীণ জীবনে এই ফুল কেবল শোভা নয়, অনেক সময় খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। শাপলার শেকড় ও কন্দ খাওয়া যায় এবং ফুলটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের লোকসংস্কৃতির সাথে মিশে আছে।
🇧🇩 স্বাধীনতার পর জাতীয় প্রতীক নির্ধারণ
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ সরকার দেশের জন্য একটি পরিচয়মূলক প্রতীক নির্ধারণ করতে শুরু করে। জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের মতোই একটি জাতীয় ফুলের প্রয়োজন ছিল।
তখন বিবেচনায় আনা হয়েছিল কিছু জনপ্রিয় ফুল—গোলাপ, শিউলি, জবা ও শাপলা। এর মধ্যে শাপলাই বেছে নেওয়া হয় কারণ—
• শাপলা বাংলাদেশের প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
• এটি দেশের সর্বত্র সহজলভ্য এবং গ্রামীণ জীবনের প্রতীক।
• পানির সাথে শাপলার সম্পর্ক বাংলাদেশের নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতির প্রতিফলন।
• শাপলার শান্ত, স্নিগ্ধ রূপ আমাদের সংস্কৃতিতে সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
🪷 সংবিধানে শাপলার স্বীকৃতি
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক ও প্রতীকচিহ্নে (National Emblem) শাপলার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধানের ৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় প্রতীকে পানির উপর ভাসমান একটি শাপলার চারপাশে ধানের শীষ, দুই পাশে পাটের পাতা এবং উপরে তিনটি সংযুক্ত জুট করা পাতার প্রতীক রয়েছে। এর মাধ্যমে শাপলা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
🌿 সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
শাপলা শুধু প্রতীকে নয়, কবিতা, গান, লোককথা, চিত্রকলাতেও বারবার এসেছে। “শাপলা শাপলা রঙিন শাপলা” গ্রামীণ বাংলার পরিচিত গান। আবার অনেক কবি-সাহিত্যিক তাদের রচনায় শাপলার শান্ত সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন।
✅ উপসংহার
শাপলা জাতীয় ফুল হওয়া শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নয়; এটি বাংলাদেশের মাটি, জল, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সাথে গভীর সম্পর্কের প্রতিফলন। শাপলা আমাদের শেকড় ও পরিচয়ের প্রতীক, যা চিরকাল জাতীয় গৌরব হিসেবে অটুট থাকবে।


No comments