শিশু জন্মের কতদিন পর নাম রাখা উত্তম: শরীয়তের বিধান এবং আমাদের করণীয়
“শিশু জন্মের কতদিন পর নাম রাখা উত্তম – শরীয়তের দৃষ্টিতে” এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুন্দরভাবে সাজানো ইসলামিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হলো, আপনারা যেন উপকৃত হতে পারেন।
---
🕌 শিশু জন্মের কতদিন পর নাম রাখা উত্তম: শরীয়তের বিধান এবং আমাদের করণীয়
✍️ ভূমিকা
নবজাতকের আগমনে প্রতিটি পরিবারে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। ইসলাম ধর্মে এই আনন্দের মুহূর্তকে কেন্দ্র করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় নির্ধারিত হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো শিশুর নাম রাখা। একটি সুন্দর ও অর্থবোধক নাম শুধু পরিচিতির মাধ্যম নয়, বরং তার ভবিষ্যৎ জীবনের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ইসলাম শিশুর নামকরণে নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মনীতি নির্ধারণ করেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, শরীয়তের দৃষ্টিতে নবজাতকের নাম রাখার সঠিক সময় ও পদ্ধতি কী।
---
🕋 ইসলামিক শরীয়তে নাম রাখার সময়
১. জন্মের পর প্রথম দিনেই নাম রাখা:
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু শিশুর নাম জন্মের দিনেই রেখেছেন। যেমন—ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন: > "রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘আজ রাতে আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে, আমি তার নাম ইব্রাহিম রেখেছি।’"
📚 (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৩১২৬)
২. সপ্তম দিনে নাম রাখা:
সপ্তম দিনে আকীকা করার সময় নাম রাখা উত্তম। হাদীসে এসেছে: > ‘‘প্রত্যেক সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার আকীকাহ সহ। সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করা হবে, মাথার চুল ফেলা হবে এবং নাম রাখা হবে।’' 📚 (তিরমিজি, হাদীস: ১৫২২)
✅ ইসলামিক শরীয়তে নাম রাখার নির্দিষ্ট সময় নিয়ে দুটি প্রথা আছে –
১| জন্মের প্রথম দিনেই নাম রাখা যেতে পারে
২| অথবা সপ্তম দিনে (আকীকার দিন) নাম রাখা উত্তম
দুটো সময়ই গ্রহণযোগ্য এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে অনেক আলেম সপ্তম দিনকে অধিক ফজিলতপূর্ণ বলে থাকেন, কারণ এই দিনই আকীকা ও মাথার চুল ফেলার নিয়ম আছে।
---
📜 নাম রাখার নিয়ম ও করণীয়
সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা: নাম যেন আল্লাহর গুণবাচক নাম বা নবি-রাসূলদের নামের অনুরূপ হয়। যেমন: আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান, ইউসুফ, মরিয়ম ইত্যাদি।
মন্দ অর্থবোধক বা শিরকসংশ্লিষ্ট নাম থেকে বিরত থাকা: যেমন, ‘আব্দুন্নবী’, ‘আব্দুলউজ্জা’ (মূর্তির নামের দাস) ইত্যাদি।
---
🌟 উপসংহার
ইসলামের দৃষ্টিতে নবজাতকের নাম রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধুমাত্র পরিচয়ের মাধ্যম নয় বরং তার আত্মপরিচয় ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রতিফলন। জন্মের প্রথম দিন কিংবা সপ্তম দিনে নাম রাখা উভয়ই শরীয়তসম্মত। তবে সপ্তম দিনকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এদিন আকীকা ও অন্যান্য সুন্নাত কাজ আদায়ের মাধ্যমে শিশুর জন্য দোয়া, পরিচর্যা ও আশীর্বাদের দরজা খুলে যায়।
তাই প্রতিটি মুসলিম অভিভাবকের উচিত, শিশুর জন্য একটি সুন্দর, অর্থবোধক এবং ইসলামী আদর্শে পরিপূর্ণ নাম রাখা, যেন সে নামের আলোতে জীবন পথ চলতে পারে।
---
✒️ আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন এবং আমাদের সন্তানদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ ও ইসলামী নাম নির্বাচনের তাওফিক দিন। আমীন।
---
সমাপ্ত
No comments