সম্পদের অপব্যবহার এবং পরিনতি

 

misuse-diversion-resources




আল্লাহ তা‘আলা যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তার উচিৎ ধন-সম্পদকে আল্লাহ তা‘আলার একান্ত অনুগ্রহ মনে করে এর সঠিক ব্যবহার ও শরী‘আতের নির্দেশ মতে ব্যয় করতে সচেষ্ট ও সচেতন থাকা। কখনও আল্লাহ তা‘আলার আদেশ পালনে অনীহা বা অনাগ্রহ দেখানো কিংবা ধর্মের পথে খরচ করতে বা যাকাত, ফিতরা, কুরবানী ইত্যাদি আদায়ে কিংবা হকদারদের হক পূরণ করতে কার্পণ্য করা কিছুতেই উচিত নয়। 


আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তাঁর নির্দেশিত পন্থায় ব্যয় না করা হয় এবং আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ না থাকা হয় তাহলে এর শাস্তি হিসেবে অন্তরে মুনাফেকী চিরস্থায়ী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আপনার অন্তরের গভীরে পাপ গেঁথে যাবে, আপনি চাইলেও অনেক সময় তা ক্ষলান করতে পারবেন না।


পবিত্র কোরআন এর সূরা তাওবায়, আয়াত:৭৫-৭৮তে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের (নিফাক অবলম্বনকারীদের) মধ্যে কেউ কেউ এমন রয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে ওয়াদা করেছিল, তিনি যদি আমাদের নিজ অনুগ্রহে ধনসম্পদ দান করেন, তবে অবশ্যই আমরা তা আল্লাহর পথে ব্যয় করবো এবং নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। 


অতঃপর যখন তিনি তাদের নিজ অনুগ্রহে সম্পদ দান করলেন, তখন তারা তা থেকে দান করতে কার্পণ্য করলো এবং আল্লাহর হুকুম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আর তারা তো মুখ ফিরাতেই অভ্যস্ত। 


তারপর এর পরিণতিতে তাদের অন্তরে কপটতা স্থান করে নিয়েছে সেদিন পর্যন্ত- যেদিন তারা আল্লাহর সাথে গিয়ে মিলবে। তা এ জন্য যে, তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা লংঘন করেছে এবং এ জন্য যে, তারা মিথ্যা কথা বলতো। তারা কি জানে না, আল্লাহ তা‘আলা তাদের মনের কথা ও শলা-পরামর্শ সম্পর্কে অবগত এবং আল্লাহ তা‘আলা খুব ভালো করেই জানেন সমস্ত গোপন বিষয়?


হাদীস শরীফে এসেছে, একবার সা‘লাবা ইবনে হাতেব আনসারী, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে ধনসম্পদ প্রাপ্তির জন্যে দু‘আ কামনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিরুৎসাহিত করে ফিরিয়ে দেন।


কিন্তু তিনি পরে আবার এসে একই নিবেদন করলেন এবং এই অঙ্গীকার করলেন, যদি আমি মালদার হই, তবে আমি প্রত্যেক হকদারকে তার হক বা প্রাপ্য পৌঁছে দিব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ সত্ত্বেও তার জন্য দু‘আ করলেন, আয় আল্লাহ, আপনি সা‘লাবাকে সম্পদশালী বানিয়ে দিন।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আর ফলে সা‘লাবার ছাগল-ভেড়া তড়িৎগতিতে বাড়তে আরম্ভ করলো। এমনকি একসময় মদীনায় বসবাসের জায়গাটি তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে উঠলো। তখন তিনি মদীনা শহরের বাইরে চলে যান। শুধু যুহর ও আসরের নামায মদীনায় এসে আদায় করতেন।


তার ছাগল-ভেড়ার আরো বেড়ে গেলে তিনি মদীনার শহরতলী থেকে আরো দূরবর্তী এক স্থানে চলে যান। সেখান থেকে শুধু জুম‘আর নামাযের জন্য তিনি মদীনায় আসতেন এবং অন্যান্য পাঞ্জেগানা নামায সেখানেই পড়ে নিতেন।


তারপর ক্রমশ এসব ছাগল-ভেড়া বহুগুণে বেড়ে গেলে সেই জায়গাও তাকে ছাড়তে হলো এবং তিনি মদীনা থেকে বহুদূরে চলে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পরে মসজিদে নববীতে কোন ওয়াক্তের জন্যও আসতে পারলেন না। ফলে জুম‘আ ও জামা‘আত সবকিছু থেকেই তাকে বঞ্চিত হতে হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘লাবার এ অবস্থা শুনে সা‘লাবার প্রতি আফসোস প্রকাশ করেন।


কিছুদিন পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে যাকাত উসুলকারীগণ সা‘লাবার কাছে যাকাত নেয়ার জন্য হাজির হলে সে যাকাতকে জিযিয়া (অমুসলিমদের থেকে উসুলকৃত কর) সাব্যস্ত করে যাকাত প্রদান করতে অস্বীকার করে।


যাকাত উসুলকারীগণ মদীনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো সা‘লাবার প্রতি আফসোস প্রকাশ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আফসোসের কথা শুনে সা‘লাবা ঘাবড়ে গেলো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে নিবেদন করলো, আল্লাহর রাসূল, আমার যাকাত কবুল করে নিন। 


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তোমার যাকাত গ্রহণ করতে বারণ করেছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সা‘লাবা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর নিকট উপস্থিত হয়ে যাকাত কবুল করার আবেদন জানালে আবুবকর সিদ্দিক রা. ও তার যাকাত কবুল করতে অস্বীকৃতি জানান। 


আবু বকর সিদ্দিক রা. এর ওফাতের পর হযরত উমর ফারুক রা. এবং হযরত উসমান রা. ও সা‘লাবার যাকাত গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। হযরত উসমান রা.-এর খিলাফতকালেই সা‘লাবার মৃত্যু হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর)


উপরোক্ত হাদীসটি খুবই দুর্বল হাদীস, এর সত্যতা অত্যন্ত দুর্বল কিন্তু তারপরও আমাদের শিক্ষা নেয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করা হয়, কারণ আল্লাহর রহমতে পাওয়া ধন সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ না করলে সেটা পরিশেষে অভিশাপের অগ্নি গর্বে পরিণত হয়। 

No comments

Powered by Blogger.