জমি কেনার আগে অবশ্যই জেনে নিন
জমি কেনার আগে অবশ্যই জেনে নিন
যেকোনোভাবেই হোক না কেন, জমির মালিকানা যাচাই না করে জমি কেনা বোকামি। অনেক সময় জমি নিয়ে অগ্রক্রয়ের মামলাও হতে পারে। তাই পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। কোনোভাবে জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ বা মধ্যস্থতাকারীকে শতভাগ বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে
● দাগ নম্বরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার সঙ্গে আগের দলিল গুলোর মিল আছে কি না।
● জমি যাঁর কাছ থেকে কিনবেন তিনি কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন, তা দেখতে হবে।
● ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশমূলে, দান বা হেবামূলে যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দলিল যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
● পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে যদি কেউ কোনো জমি বিক্রি করতে চান, তাহলেও মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
● ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কি না।
অনেক সময় দেখা যায়, একজনের নাম করা জমি অন্য একজন ভুয়া দলিল দেখিয়ে বিক্রি করেছেন। পরে আসল মালিক ক্রেতাকে জড়িয়ে আদালতে মামলা করেন। তাই কেনার আগে জমির ক্রেতাকে বিভিন্ন দলিল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে জমির মালিকের মালিকানা বৈধতা ভালো করে যাচাই করতে হবে। অন্যথায় জমি কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হতে হবে।
মালিকানা যাচাই না করে জমি কিনলে ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় জমির মূল অংশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। জমির বিভিন্ন ধরনের দলিল থাকতে পারে। বিক্রয় দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান সবই হচ্ছে দলিল। ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সবশেষে যে দলিল করা হয়েছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না।
বিশেষ করে ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না তা দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়।
যেমন ধরা যাক,
আপনি কিছু জমি ২০১৫ সালে ১২০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কেনেন। সেই জমি ২০১৬ সালে অন্য একজনের কাছে ২২০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। তাহলে আগের ১২০ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া দলিল। হস্তান্তর করা দলিলে দাতা এবং গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, জোত নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ভালো করে দেখতে হবে।
আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে, ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কি না। অনেক সময় আগের দলিলের চেয়ে পরের দলিলে বেশি জমি দেখানো হয়। খতিয়ানের ক্ষেত্রে আগের খতিয়ানগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ খতিয়ানের মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতে হবে।
মিউটেশন বা নামজারির মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে, সে মতো খতিয়ানে দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ যোগ করতে হবে। এই যোগফল কোনো দাগে মোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার চেয়ে কম না বেশি তা দেখা দরকার। যদি বেশি হয়, তবে অতিরিক্ত জমির মালিকানা কোনোভাবেই দাবি করা যাবে না।
দেখতে হবে মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কি না এবং নামজারি যদি না হয় তাহলে কী কারণে হলো না তা জানতে হবে। মিউটেশন না করা থাকলে জমি কিনতে সমস্যা হবে। অনেক সময় ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল তৈরি করে জমি বিক্রির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। জমি কেনার ক্ষেত্রে সেটা সরকারি মালিকানা বা অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত কি না, অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে।
ক্রেতা নিজেকেই মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে কিংবা যাচাই-বাছাই করে জমি কিনতে হবে। না হলে মালিকানা-সংক্রান্ত একটু জটিলতা সারা জীবনের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া মামলা-মোকদ্দমার হয়রানি তো রয়েছেই।
No comments