করলা খেলে মায়ের বুকের দুধ কমে যায়—কতটা সত্য?

 



বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ধারণা আছে—যে মা তার শিশুকে দুধ খাওয়ান, তিনি যদি করলা খান, তাহলে নাকি মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায় বা কমে যায়। কিন্তু বাস্তবে এই ধারণাটি কতটা বৈজ্ঞানিক? করলা কি সত্যিই দুধ কমিয়ে দেয়? নাকি এটি কেবলমাত্র একটি ভুল ধারণা? চলুন বিজ্ঞান ও পুষ্টিবিদ্যার আলোকে বিষয়টি পরিষ্কার করে জেনে নিই।


করলা ও বুকের দুধ: বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা


করলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি, যার মধ্যে রয়েছে—

ভিটামিন A, C

আয়রন

ক্যালসিয়াম

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

ফাইবার

এসব উপাদান মায়ের শরীরকে সুস্থ রাখে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিক কোনো গবেষণায় করলা খাওয়ার কারণে বুকের দুধ কমে যায়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।



দুধ কমে যাওয়ার মূল কারণ সাধারণত অন্য কিছু

বুকের দুধ কমে যাওয়ার প্রকৃত কারণগুলো হলো—

পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া

মানসিক চাপ

শিশুকে কম বুকের দুধ খাওয়ানো

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব

হরমোনজনিত সমস্যা

অপুষ্টি

এই কারণগুলোর সাথে করলার কোনো সম্পর্ক নেই।


তাহলে এই ধারণা এলো কোথা থেকে?

করলা স্বাদে তেতো। অনেকের ভুল ধারণা যে তেতো খাবার শরীরে “শুকনোভাব” সৃষ্টি করে। অতীতে অনুভূত বা কাকতালীয় কারণে কিছু মায়ের দুধ সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে, আর তারা হয়তো সেটিকে করলা খাওয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।

কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান স্পষ্ট—করলা দুধ কমিয়ে দেয় না।


করলা কি মায়ের জন্য নিরাপদ?

হ্যাঁ, সাধারণ পরিমাণে করলা খাওয়া নিরাপদ।

তবে কিছু ক্ষেত্রে করলা কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়—

যাদের রক্তে শর্করা খুব কম

ডায়াবেটিসের ওষুধ খান (করলা রক্তে শর্করা কমিয়ে দিতে পারে)

যাদের পেট খুব সংবেদনশীল

তবে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের জন্য করলা সাধারণত কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।


মায়ের দুধ ঠিক রাখতে যা করা জরুরি

• প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান

• পুষ্টিকর খাবার (ডাল, শাকসবজি, ফল, মাছ, ডিম, মাংস)

• মানসিক চাপ কম রাখা

• নিয়মিত শিশুকে দুধ খাওয়ানো

যথেষ্ট ঘুম

এসব মানলে করলা হোক বা অন্য সবজি—মায়ের দুধ যথেষ্ট থাকবে।



উপসংহার

“করলা খেলে মায়ের দুধ শুকিয়ে যায়”—এটি একটি ভুল ধারণা।

বুকের দুধের পরিমাণ করলা নয়, বরং মায়ের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক অবস্থা এবং শিশুর দুধ খাওয়ার নিয়মের ওপর নির্ভর করে।

তাই দুধ খাওয়ানো মায়েরা নিশ্চিন্তে করলা খেতে পারেন—অবশ্যই স্বাভাবিক পরিমাণে ও সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে।

No comments

Powered by Blogger.