নবজাতক শিশুর সর্দি হলে করণীয়: কারণ, যত্ন ও সতর্কতা
শিশুরা জন্মের পর প্রথম বছরটিতে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা সর্দিতে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তখনও সম্পূর্ণ গড়ে ওঠে না। বিশেষ করে চার মাস বয়সে শিশুর হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা সর্দি হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা।
কিন্তু পিতামাতার জন্য এটি উদ্বেগের বিষয়। তাই জেনে নিই, কী কারণে এমন হয় এবং কীভাবে শিশুকে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে।
🌧️ সর্দি বা ঠান্ডার কারণ
১. ভাইরাল ইনফেকশন (Viral Infection):
শিশুদের মধ্যে সর্দির সবচেয়ে সাধারণ কারণ এটি। যেমন রাইনোভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (RSV) ইত্যাদি।
২. আবহাওয়ার পরিবর্তন:
হঠাৎ ঠান্ডা বা গরমের পরিবর্তন, বৃষ্টি বা ধুলাবালি শিশুর সংবেদনশীল শরীরে প্রভাব ফেলে।
৩. অ্যালার্জি:
ধুলা, পারফিউম, ধোঁয়া বা পোষা প্রাণীর লোম থেকেও শিশুর হাঁচি ও সর্দি হতে পারে।
৪. শুষ্ক বাতাস:
বিশেষ করে শীতকালে ঘরের বাতাস শুষ্ক থাকলে শিশুর নাকের ভিতর শ্লেষ্মা শুকিয়ে যায়, ফলে ঠান্ডা ও হাঁচি বাড়ে।
🩺 উপসর্গ
ঘন ঘন হাঁচি
নাক দিয়ে পানি পড়া বা বন্ধ হয়ে থাকা
হালকা কাশি
বুক ভার লাগা
খাওয়ায় অনীহা বা দুধ খেতে কষ্ট
মাঝে মাঝে কান্না বা অস্থিরতা
🏡 ঘরোয়া যত্ন ও করণীয়
১. নাক পরিষ্কার রাখা:
শিশুর নাকে যদি শ্লেষ্মা জমে, তাহলে সালাইন ড্রপ (Normal Saline Nasal Drops) ব্যবহার করো।
এটি নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা নরম করে শ্বাস নিতে সাহায্য করে।
দিনে ৩–৪ বার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শে।
২. ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখা:
ঘরে ধুলা, ধোঁয়া, পারফিউম, মশার কয়েল বা আগরবাতি ব্যবহার কোরো না।
ঘরে সামান্য বাষ্পীয় আর্দ্রতা বজায় রাখো (humidifier ব্যবহার করলে ভালো)।
৩. বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাও:
মায়ের দুধই শিশুর প্রধান রোগ প্রতিরোধ শক্তি।
শিশুর নাক বন্ধ থাকলে খাওয়ানোর আগে সালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করো।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম দাও:
শিশুকে শান্ত, উষ্ণ পরিবেশে রাখো।
অপ্রয়োজনে বেশি লোকের সংস্পর্শে আনো না।
⚠️ সতর্কতা — কখন ডাক্তারের কাছে নেওয়া জরুরি
নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাও—
জ্বর (১০০.৪°F বা তার বেশি)
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বা বুক ঢুকে যাচ্ছে
খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বা দুধ খেতে পারছে না
শিশুর ত্বক ফ্যাকাশে বা নীলচে
অস্বাভাবিকভাবে নিস্তেজ বা কাঁদছে না
💊 ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ
👉 চার মাসের শিশুকে নিজে থেকে কোনো ঠান্ডা বা কাশির ওষুধ দিও না।
এমনকি বাজারে বিক্রি হওয়া “baby cold syrup” বা “cough medicine” শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সব ওষুধই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দিতে হবে।
🌸 উপসংহার
চার মাসের শিশুর ঠান্ডা সাধারণত গুরুতর কিছু নয়। মায়ের দুধ, নাক পরিষ্কার রাখা এবং ঘরের উষ্ণ ও ধুলামুক্ত পরিবেশই শিশুর দ্রুত সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। তবে শিশুর শ্বাসে সমস্যা বা জ্বর দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারকে দেখানোই সবচেয়ে নিরাপদ পদক্ষেপ।


No comments