মহিলাদের স্তন ক্যান্সার: লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

 



বর্তমান যুগে স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এমন একটি মারাত্মক রোগ। আগে এটি শুধুমাত্র বয়স্ক নারীদের রোগ বলে মনে করা হলেও এখন ২৫ বছর বয়সী তরুণীরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করলে স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময়ও সম্ভব।


🔍 স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় তেমন কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি দেখা যায় না। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি—

স্তনে বা বগলের পাশে গিঁট (লাম্প) অনুভব করা।

স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন (একটি স্তন বড় বা ফুলে যাওয়া)।

স্তনের চামড়া মোটা বা কুঁচকে যাওয়া, কমলালেবুর খোসার মতো দেখা।

বোঁটা (nipple) থেকে রক্ত বা তরল নিঃসরণ হওয়া।

বোঁটার ভেতরে ঢুকে যাওয়া বা আকৃতি পরিবর্তন।

স্তনে বা বগলে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা ভারি অনুভব হওয়া।

এই লক্ষণগুলো সবসময় ক্যান্সারের জন্য নয়, তবে এমন কিছু দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।



⚠️ স্তন ক্যান্সারের প্রধান কারণ

স্তন ক্যান্সারের একক কোনো কারণ নেই, তবে কিছু ঝুঁকি-উপাদান রয়েছে যা এ রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়—

বংশগত কারণ: পরিবারের মা, বোন বা খালার কারো স্তন ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেশি।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

দেরিতে সন্তান ধারণ বা সন্তান না হওয়া।

স্তন্যদান না করা বা অল্প সময় স্তন্যদান।

অতিরিক্ত মোটা (স্থূলতা) থাকা।

ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন।

শরীরচর্চার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাপন।



🩺 স্তন ক্যান্সারের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়

নিজে পরীক্ষা (Self-Examination): প্রতি মাসে মাসিকের ৫-৭ দিন পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্তন ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ৪০ বছরের পর থেকে প্রতি বছর মেমোগ্রাম (Mammogram) টেস্ট করা উচিত।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাবার খাওয়া।

ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।

সন্তান জন্মের পর দীর্ঘ সময় স্তন্যদান করা।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।



💊 স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধাপ (Stage) ও প্রকৃতির ওপর। আধুনিক চিকিৎসায় এটি অনেকাংশেই নিরাময়যোগ্য। প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো—

সার্জারি (Surgery): ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু বা পুরো স্তন অপসারণ করা হয়।

কেমোথেরাপি (Chemotherapy): ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার ওষুধ প্রয়োগ।

রেডিওথেরাপি (Radiotherapy): রেডিয়েশন দিয়ে আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা হয়।

হরমোন থেরাপি: হরমোন-নির্ভর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি: আধুনিক চিকিৎসা যেখানে ক্যান্সার কোষকে নির্দিষ্টভাবে আক্রমণ করা হয়।

চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, সুস্থতার সম্ভাবনাও তত বেশি।



🌿 সচেতনতা ও মানসিক শক্তি

স্তন ক্যান্সার কেবল শারীরিক নয়, মানসিক লড়াইও বটে। তাই আক্রান্ত নারীকে সাহস, ভালোবাসা ও মানসিক সমর্থন দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করা দরকার— যেন কোনো নারী নিজের শরীরের পরিবর্তন নিয়ে লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন।



🌸 উপসংহার

স্তন ক্যান্সার এখন আর মৃত্যুবার্তা নয়, বরং একটি সতর্ক সংকেত। সচেতনতা, নিয়মিত পরীক্ষা, এবং সুস্থ জীবনযাপনই পারে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে। নারীরা যদি নিজের প্রতি যত্নবান হন, তবে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্পূর্ণ সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.