আধুনিক ইস্পাত শিল্প ও আসন্ন বিপ্লব
ইস্পাত মানব সভ্যতার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে আধুনিক নগরায়ণ—সব জায়গায় ইস্পাতের ব্যবহার অপরিহার্য। তবে ইস্পাত উৎপাদনের আধুনিক ইতিহাস শুরু হয়েছিল প্রায় ১৮৫০ সালের দিকে, যখন বেসেমার আধুনিক ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়া খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৌশলীরা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে এক বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছেন। বর্তমানে ৩,৫০০ টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ইস্পাত তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতিটি ধরনের ইস্পাতের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে—কেউ বেশি শক্তিশালী, কেউ টেকসই, আবার কেউ পরিবেশবান্ধব। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, আধুনিক ইস্পাতের প্রায় ৭৫ শতাংশ তৈরি হয়েছে গত ২০ বছরের মধ্যেই। অর্থাৎ, ইস্পাত শিল্পে উন্নয়নের গতি অত্যন্ত দ্রুত।
এ কারণেই ইস্পাত আজ শুধু নির্মাণ শিল্পেই নয়, প্রযুক্তি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পরিবহন, এমনকি মহাকাশ গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
আসছে নতুন বিপ্লব
আজ ইস্পাত শিল্প আরেকটি বড় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এতদিন ইস্পাত তৈরিতে কয়লা প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু কয়লা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। তাই গবেষকরা এখন কয়লার বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন—হাইড্রোজেন।
হাইড্রোজেন ব্যবহারের মাধ্যমে ইস্পাত উৎপাদন অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব হবে। এতে দূষণ কমবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি হ্রাস পাবে এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে।
উপসংহার
ইস্পাত শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় দুই শতাব্দী আগে, কিন্তু এর অগ্রগতি এখনো থেমে নেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে, উন্নত হচ্ছে এর গুণগত মান। আর হাইড্রোজেনের ব্যবহার শুরু হলে ইস্পাত শিল্পে আসবে এক নতুন বিপ্লব, যা শুধু শিল্পকেই নয়, পুরো পৃথিবীর পরিবেশকেও বদলে দেবে ইতিবাচকভাবে।
No comments