স্কাবিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা – বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান এক চর্মরোগ

 



বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে স্কাবিস বা গালফড়া এক মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া চর্মরোগে পরিণত হয়েছে। গ্রাম থেকে শহর, শিশু থেকে প্রবীণ—প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় এই রোগের শিকার হচ্ছেন। এটি একটি সংক্রামক রোগ, যা ত্বকের নিচে ক্ষুদ্র পরজীবী মাইটের আক্রমণে হয়। সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে স্কাবিস দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।


স্কাবিস হওয়ার কারণ


স্কাবিসের মূল কারণ হলো Sarcoptes scabiei নামের এক ধরনের পরজীবী মাইট। এরা ত্বকের উপরের স্তরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে সেখানে ডিম পাড়ে এবং বংশবিস্তার করে।

প্রধান সংক্রমণের কারণগুলো হলো—


1. ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ – একই বিছানায় ঘুমানো, কাপড়-তোয়ালে শেয়ার করা।



2. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ – অপরিষ্কার জামাকাপড়, বিছানাপত্র ও বাসস্থান।



3. দীর্ঘ সময় সংস্পর্শে থাকা – পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে প্রায় সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।



4. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা – শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়।


স্কাবিসের লক্ষণ


• তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতের বেলা বেড়ে যায়।


• ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা লাল দাগ।


• আঙুলের ফাঁক, কবজি, কনুই, বগল, কোমর, স্তনের নিচে ও যৌনাঙ্গের চারপাশে ছোট গর্তের মতো চিহ্ন।


• চুলকানোর কারণে ত্বকে ঘা বা সংক্রমণ হতে পারে।


স্কাবিসের চিকিৎসা


স্কাবিসের চিকিৎসায় শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিকে নয়, তার আশেপাশের সবাইকেও একইসাথে চিকিৎসা নিতে হয়।


1. ঔষধ ব্যবহার


Permethrin 5% ক্রিম বা লোশন – চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুরো শরীরে (ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত) লাগিয়ে ৮-১২ ঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলতে হয়।


Benzyl benzoate লোশন – বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।


Ivermectin ট্যাবলেট – গুরুতর সংক্রমণে বা অনেক জন আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া যায়।




2. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা


আক্রান্ত ও পরিবারের সকলের কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে।


আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত একই বিছানায় বা পোশাক-তোয়ালে শেয়ার করা যাবে না।




3. চুলকানি কমানো


চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।


প্রতিরোধের উপায়


• নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার জামাকাপড় ব্যবহার।


• পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে সবাই একসাথে চিকিৎসা নেওয়া।


• স্কুল, হোস্টেল বা জনবসতিপূর্ণ জায়গায় সচেতনতা বৃদ্ধি।



স্কাবিস অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অবহেলার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই রোগ রোধ করতে হলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং আশেপাশের সবাইকে সচেতন করা জরুরি। মনে রাখতে হবে—এই রোগ চিকিৎসাযোগ্য, তবে অবহেলা করলে এটি বারবার ফিরে আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.