অমনোযোগী বা তুলনামূলক কম মেধাবী শিশুদের সহজে পড়াশোনা শেখানোর উপায়

 



প্রতিটি শিশুর শেখার ধরন, গতি ও আগ্রহ এক নয়। কেউ খুব দ্রুত শিখে ফেলে, আবার কেউ কিছুটা সময় নিয়ে বুঝে নেয়। তাই যারা তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী বা পড়ায় অমনোযোগী, তাদেরকে বকাঝকা বা শারীরিক শাস্তি না দিয়ে ভালোবাসা, ধৈর্য আর কৌশল দিয়ে শেখানো উচিত। 


বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজির মতো কিছু বিষয় অনেক শিশুর কাছেই কঠিন মনে হয়। তবে উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে এসব বিষয়কেও তারা আনন্দের সাথে শিখতে পারে।


১. ভালোবাসা ও ধৈর্য দিয়ে শুরু হোক শিক্ষা

শিক্ষার প্রথম ধাপ হলো শিশুর মনে ভয় দূর করা। যদি তারা পড়া শুরুর সময়েই রূঢ়তা কিংবা চাপে পড়ে, তাহলে শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই শিশুর প্রতি ধৈর্য ধরুন, তার ভুলকে ক্ষমা করে দিন এবং তাকে বোঝান—সে পারবে, আপনি তার পাশে আছেন।


২. ছোট ছোট ধাপে পড়া ভাগ করে দিন

অনেক সময় বড় একটি পাঠ শিশুদের কাছে ভয়াবহ মনে হয়। তাই বড় বিষয়কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন। উদাহরণস্বরূপ:


গণিতে প্রথমে সংখ্যা চিনে নেওয়া, পরে যোগ-বিয়োগ, তারপর গুণ-ভাগ।


ইংরেজিতে প্রথমে বর্ণমালা, তারপর শব্দ শেখা, পরে বাক্য গঠন।



এইভাবে ধাপে ধাপে এগোলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে।


৩. খেলাধুলার মতো করে শেখানো

শিক্ষা যদি আনন্দদায়ক হয়, শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা গ্রহণ করে। গেম, চার্ট, কার্ড, রঙিন বই, ছবিযুক্ত গল্প এসব উপকরণ ব্যবহার করে শেখালে শিশুর মনোযোগ সহজেই আকৃষ্ট হয়।


উদাহরণস্বরূপ:


"A for Apple" শেখাতে একটি আপেল হাতে নিয়ে শেখানো।


গণিত শেখাতে খেলনা ব্যবহার করে যোগ-বিয়োগ শেখানো।


৪. অনুপ্রেরণা ও প্রশংসা দিন

শিশু যদি সামান্য কিছু শিখেও, সেটির জন্য তাকে প্রশংসা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সে আরও শিখতে উৎসাহী হয়। যেমন:

“তুমি খুব ভালোভাবে পড়েছ!”

“দেখো, তুমি কিন্তু অনেক এগিয়ে গেছ!”


এই ছোট ছোট বাক্যগুলো তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।


৫. শেখার সময় নির্দিষ্ট করুন, তবে চাপ নয়

শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন, তাই পড়ার সময় যেন বেশি দীর্ঘ না হয়। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়া ধরলে শিশুরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।


৬. গল্প বা উদাহরণ ব্যবহার করুন

বিশেষ করে ইংরেজি শেখানোর সময় গল্প বা চরিত্র তৈরি করে শেখালে শিশুরা খুব আগ্রহী হয়। যেমন:

“Tom is a boy. He has a red ball.” এই ধরনের বাক্য ছোটদের খুব সহজে শেখানো যায়।


৭. পড়া শেখানোর পরিবেশ তৈরি করুন

একটি শান্ত পরিবেশ, যেখানে ফোন, টিভি বা অন্য কোনো বিভ্রান্তিকর কিছু নেই—সেই জায়গায় পড়া শেখালে শিশুর মনোযোগ বাড়ে।


৮. প্রযুক্তির সাহায্য নিন

আজকের যুগে ইউটিউব, শিক্ষামূলক অ্যাপস, এনিমেটেড ভিডিও ইত্যাদি ব্যবহার করে শেখানো অনেক সহজ। তবে অবশ্যই সময় সীমিত রেখে ব্যবহার করা উচিত।


শেষ কথা

শিশুদের মনে রাখতে হবে—তারা কেউই “কম বুদ্ধিমান” নয়, বরং সঠিক পদ্ধতি না পাওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ে। ভালোবাসা, ধৈর্য এবং সৃজনশীল উপায়ে পড়ানো গেলে প্রতিটি শিশুই পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে। মা-বাবা বা শিক্ষকের সামান্য উৎসাহ ও সহানুভূতি বদলে দিতে পারে একটি শিশুর পুরো ভবিষ্যৎ।

No comments

Powered by Blogger.