হযরত মারিয়াম আ. এর লালন-পালনে যাকারিয়া আ.-এর ভূমিকা

 

hazrat-maryam-role-zakaria-in-its-upbringing

ইমরান-কন্যা হযরত মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের জন্ম ও বাল্যকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হযরত যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। সে আলোচনায় আবার তাঁর সন্তান হযরত ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালামের আলোচনা এসেছে। 


আল্লামা ইবনে ইসহাক রহ. বলেন, ইমরান-কন্যা মারিয়ামকে যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের তত্ত্বাবধানে প্রদানের কারণ হল, তিনি পিতৃহীন ছিলেন। মুসতাদরাকে হাকিমে বর্ণিত এক হাদীসের ভাষ্যমতে, পিতা তো আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন, অতঃপর মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের মাতার মৃত্যুর পর তাকে যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়। 


এ থেকে বুঝা যায়, শিশু মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামকে যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের তত্ত্বাবধানে দেয়ার সময় তার বাবা-মা কেউ জীবিত ছিলেন না। কোন কোন মুফাসসির বলেন, সে বছর বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের মাঝে দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। 


এ কারণে যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম শিশু মারিয়ামকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়েছিলেন। তবে মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামকে নিজের দায়িত্বে নিতে যাকারিয়া আলাইহি সব সময়সালামকে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এর বিস্তারিত ঘটনা হল, ইকরীমা রা. বলেন, মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের আম্মা মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামকে কোলে নিয়ে কাহিন বিন হারুন ‘আলাইহিস সালামের বংশধরের কাছে গেলেন। 


তখন তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দায়িত্বে ছিলেন। ইমরান ‘আলাইহিস সালামের স্ত্রী হান্না তাদের বললেন, মান্নতকৃত এই শিশুটি আপনারা রাখুন। কারণ, আমি তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমতের জন্য উৎসর্গ করেছি। আর এই হল আমার মেয়ে। জানি, ঋতুমতী নারীরা গির্জায় প্রবেশ করে না, তবু আমি একে বাড়িতে ফিরিয়ে নিব না। 


তারা বললেন, এ তো আমাদের ইমাম সাহেবের মেয়ে, যিনি আমাদের জন্য উৎসর্গিত ছিলেন। (মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের বাবা ইমরান ‘আলাইহিস সালাম তাদের নামাযের ইমামতি করতেন।) সেসময় যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম বললেন, একে আমার তত্ত্বাবধানে দাও। 


কারণ, আমার স্ত্রী এর খালা। তখন তারা বললেন, না, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। সে হল আমাদের ইমাম সাহেবের মেয়ে। আমরা তার তত্ত্বাবধান করবো। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, এ ব্যাপারে ভাগ্যপরীক্ষা করা হবে। এতে যার নাম আসবে, তিনিই হবেন মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের তত্ত্বাবধায়ক। 


সেমতে তারা সকলে জর্ডান নদীর তীরে গিয়ে ভাগ্যপরীক্ষা শুরু করলেন। ভাগ্যপরীক্ষার পদ্ধতি সাব্যস্ত হল, এতে যারা অংশগ্রহণ করবেন, তারা সকলে নিজ নিজ কলম নদীতে নিক্ষেপ করবেন। প্রবহমান পানিতে যার কলম ভেসে থাকবে, তিনিই হবেন মারিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক। 


কথামতো সকলেই নিজ নিজ কলম নদীতে নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামের কলম ব্যতীত সবার কলম পানিতে ডুবে গেল। ফলে যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের তত্ত্বাবধায়ক সাব্যস্ত হলেন।


বস্তুত ইমরান-কন্যার সৌভাগ্যই বলতে হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালামকে তার তত্ত্বাবধানে নিয়োগ করেন। এতে মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের জন্য তাঁর থেকে কল্যাণ ও জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ তৈরি হয় এবং সুন্দর চরিত্র-মাধুর্য ও আমল-আখলাক শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। তাছাড়া যাকারিয়া ‘আলাইহিস সালাম ছিলেন মারিয়াম ‘আলাইহাস সালামের খালুজান। স্বভাবতই তিনি তার প্রতি স্নেহভাজন ছিলেন।


No comments

Powered by Blogger.