জুমার নামাজ এর ইতিহাস এবং আমল ।

FRIDAY'S HISTORY | শুক্রবার এর ইতিহাস |



A N I 
ANOWAR NURUL ISLAM
FRIDAY'S HISTORY | শুক্রবার এর ইতিহাস |

আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমার দিন। সাপ্তাহিক ঈদের দিন। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিন বিশেষ সময়ে দোয়া কবুল করা হয়। কোরআন হাদিসে এ দিনের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে।

■ যেভাবে এলো জুমাবার।  
প্রথম হিজরি সন। মহানবী (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনা গেলেন। নবী (সা.) এর মদিনায় পৌঁছার দিনটি ছিল ইয়াওমুল আরুবা (শুক্রবার)। সেদিন তিনি বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় গেলে জোহর নামাজের সময় হয়ে যায়। সেখানে তিনি জোহর নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

তবে জুমার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় আরো পরে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মদিনায় যাওয়ার পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসার সাহাবিরা আলোচনায় বসেন। তারা বললেন, ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট রয়েছে, যে দিনে তারা সবাই একত্র হয়। খ্রিস্টানরাও সপ্তাহে একদিন একত্র হয়। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব।

অতঃপর তারা আলোচনায় বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে ‘জুমার দিন’ নামকরণ করলেন। (সীরাতুল মুস্তাফা ও দারসে তিরমিজি)
কোরআনে জুমার দিন ।
জুমার দিন ও জুমার নামাজের গুরুত্ব স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও কোরআনে তুলে ধরেছেন। পবিত্র কোরআনের ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বুঝো। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)
হাদিসে জুমার দিন ।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করল, অতঃপর জুমা পড়তে এলো এবং মনোযোগ দিয়ে নীরব থেকে খুতবাহ শুনল, সে ব্যক্তির এই জুমা ও (আগামী) জুমার মধ্যেকার এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের (ছোট) পাপগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।(মুসলিম, হাদিস নং: ৮৫৭)

■ জুমার নামাজের বিধান |
শুক্রবার জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৬৭; মুসতাদরেকে হাকেম, হাদিস নং : ১০৬২; আস্-সুনানুল কাবির, হাদিস নং: ৫৫৮৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দফতরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তনও করা যাবে না।’ (তাফসিরে মাজহারি, খণ্ড: ৯, পৃষ্ঠা: ২৮৩)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, যেসব লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না), তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সব লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই। (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৫২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ৩৮১৬; মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং: ৫৫৩৯; আসু-সুনানুল কুবরা, হাদিস নং: ৪৯৩৫)

■ জুমার সময়ে নিষিদ্ধ কাজ । 
জুমার দিনে মূলত আজানের পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টিতে কিছু ফরজ বিধান রয়েছে। এ সময়টিতে কিছু বিধান মেনে চলতে হবে। শরীয়ত বহির্ভূত কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন আজান হয়ে যাওয়ার পরও ব্যবসা বা অনর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে লিপ্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন খুতবা প্রদানের সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, ‘চুপ করো’ তখন তুমি অনর্থক কথাই বললে।” (সহিহ বোখারি: ১/১২৮)

বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণ হয়, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব এবং কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না।’ (মেশকাত: ৩/৪৩২)

ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে শামিতে একটি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেসব কর্ম নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়েও হারাম। যেমন: কথাবার্তা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৩/৩৫)


THANK YOU ALL.
A N I .
Powered by Blogger.